প্রোগ্রামিং শুরু করো ১, একটা ভালো কম্পিউটার সিলেক্ট করা

প্রোগ্রামিং করতে হলে তোমার একটা কম্পিউটার লাগবে। তোমার প্রথম কম্পিউটার দিয়েই তুমি কোডিং শিখবে, প্র্যাকটিস করবে, আর সফটওয়্যার বানাবে। এখন তোমার কাছে দুইটা অপশন আছেঃ ১) ডেস্কটপ কম্পিউটার, ২) ল্যাপটপ কম্পিউটার।

দুই ধরনের কম্পিউটারেরই সুবিধা অসুবিধা আছে। সবচেয়ে ভালো হয় যদি তোমার কাছে ল্যাপটপ, ডেস্কটপ দুইটাই থাকে, তাহলে তুমি এগুলো ইউজ করে বুঝতে পারবে যে কোনটাতে তুমি বেশি প্রোডাক্টিভ।

এই লেখাটা যারা পড়ছো, আমি ধারনা করছি তুমি মাত্রই শুরু করছো আর তুমি যেকোন একটা অপশন এখন নিতে পারবে। তাহলে চলো ডেস্কটপ আর ল্যাপটপ দুইটার ব্যাপারেই আলোচনা করিঃ

ডেস্কটপ কম্পিউটারে কোডিং

ডেস্কটপ কম্পিউটার মানে তোমার টেবিলের মধ্যে এই পিসিটা সেটাপ করা থাকে। এর আলাদা মনিটর, মাউস, কী-বোর্ড থাকবে। ডেস্কটপে তুমি তোমার সুবিধা মত মাউস, কী-বোর্ড, মনিটর, এমন কি সিপিইউ কেসিং পাল্টাতে পারবে।

আমি প্রায় ২০ বছর ধরে ডেস্কটপ কম্পিউটার ইউজ করে আসছি, আর আমি বলতে পারি, ডেস্কটপ কম্পিউটার গুলো অনেক শক্ত পোক্ত হয়। সারাদিন ইউজ করলেও ডেস্কটপ সেই লোড নিতে পারে। এই কম্পিউটারটা খুব সহজেই আপগ্রেড করা যায়।

আমার সবচেয়ে ভালো যে জিনিসটা লাগে সেটা হলো বড় স্ক্রিনে কাজ করা। আমার মনিটরটা ২২ ইঞ্চি। আমি চাইলে আরো বড় মনিটর, বা একাধিক মনিটরও কানেক্ট করতে পারবো।

ডেস্কটপে কাজ করতে হলে তোমার সেই একটা ডেস্কে বসেই কাজ করতে হবে। তার মানে যেই রুম আর টেবিলে তোমার মূল ডেস্কটপটা সেটাপ করা আছে, সেখানে বসেই তোমাকে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশের অনেক এলাকায় লোডশেডিং একটা সমস্যা। ঘন ঘন লোডশেডিং হলে কিন্তু পিসি অফ হয়ে যাবে। বর্তমানে পিসির পাওয়ার ব্যাকাপ হিসেবে একটা UPS ডিভাইস আমরা কিনে নেই। বেসিক ইউ পি এস গুলো মাত্র ১০-১৫ মিনিট পিসির পাওয়ার ব্যাকাপ দেয়। এই অল্প সময়ে তুমি যাস্ট তোমার কাজটা সেভ করে রেখে দিতে পারো, আর কিছু না। এর চেয়েও বেশি ব্যাকাপ চাইলে তোমাকে তোমার পিসি তোমার বাসার IPS এর সাথে কানেক্ট করে রাখতে হবে। তাই যদি তোমার এখানে সব সময় কারেন্ট আসা-যাওয়া করে, তাহলে ডেস্কটপে কাজ করলে তোমার প্রোডাক্টিভিটির ব্যাপক হ্যাম্পার হবে।

যদি কারেন্টের ব্যাকাপটা তুমি ম্যানেজ করতে পারো, বা তোমার এখানে লোডশেডিং কোন সমস্যা না, তাহলে ডেস্কটপ কম্পিউটার, প্রোগ্রামিং করার জন্য সবচেয়ে বেস্ট অপশন হবে।

এখন চলো ল্যাপটপের কথা বলিঃ

ল্যাপটপ কম্পিউটারে কোডিং

ল্যাপটপে কাজ করার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, এটা পোর্টেবল। যেখানে সেখানে নিয়ে, শুয়ে বসে তুমি কিছু না কিছু কাজ করতে পারবে। তোমার যদি সব সময় বিভিন্ন যায়গায় ট্রাভেল করতে হয়, যেমন বাসা, অফিস, কলেজ, কফি শপ, তাহলে ল্যাপটপ তোমার জন্য বেস্ট হবে।

ল্যাপটপের বিল্ট ইন ব্যাটারিতে পাওয়ার ব্যাকাপ থাকে তাই কারেন্ট চলে গেলেও এক ঘন্টা অনায়াসেই প্রোগ্রামিং করে ফেলতে পারবে। বর্তমানের প্রায় সব ল্যাপটপই ৩-৪ ঘন্টার ব্যাটারি ব্যাকপের দাবি করে। তাই একবার ফুল চার্জ দিয়ে তুমি একটা কোডিং সেশন চালিয়ে দিতে পারবে।

পোর্টেবল হওয়া সত্বেও এর কিছু অসুবিধাও আছে। ল্যাপটপ অনেক দিন ব্যাবহার করার পরে এর ব্যাটারি ব্যাকাপ কমে যায়। যার ফলে সব সময় তোমাকে পাওয়ার ক্যাবল নিয়ে ঘুরতে হবে। নতুন একটা ব্যাটারি কিনলেও দেখা যায় এটা অরিজিনাল ব্যাটারির মত এত টেকসই হয় না।

সাধারণত ল্যাপটপ দিয়ে সারাদিন একটানা কাজ করা যায় না। পাওয়ারের সাথে লাগিয়ে কাজ করলেও সেটা লং-টার্মে অনেক ইফেক্ট ফেলে। ল্যাপটপ যেহেতু অনেক ছোট একটা প্যাকেজ, এর ইন্টার্নাল পার্টস গুলো অনেক টাইট ভাবে প্যাক করা থাকে। ল্যাপটপ রেগুলার গরম হতে হতে খুব তারাতারি এর ভিতরের পার্টসগুলো দূর্বল হয়ে যায়।

ল্যাপটপে কাজ করলে টাইপিং আর ট্র্যাকপ্যাড ইউজ করা অনেকের জন্য ঝামেলা হতে পারে। যার জন্য প্রায়ই অনেকে ল্যাপটপের সাথে আলাদা মাউস আর কী-বোর্ড ইউজ করে। আমি এখন ল্যাপটপের সাথে আলাদা মাউস ইউজ করি।

ফাইনালি, ল্যাপটপের ছোট স্ক্রিন কোডিং এর জন্য অসুবিধা হতে পারে, কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বলে যে এই ছোট স্ক্রিনে কাজ করতে করতে অভ্যাস হয়ে যায়।

ল্যাপটপ যদিও যেখানে সেখানে নিয়ে শুয়ে বসে কাজ করা যায়, কিন্তু আমি সাজেস্ট করবো ল্যাপটপও তুমি একটা চেয়ার টেবিলে বসে ইউজ করো। কোন একটা ডেডিকেটেট চেয়ার টেবিলে কাজ করলে আরো মনোযোগ দিয়ে কাজ করা যায়।

এখন যখন তুমি ডেস্কটপ ল্যাপটপ দুইটারই সুবিধা অসুবিধা জেনে গেছো, চলো দেখা যাক প্রোগ্রামিং এর জন্য কেমন কনফিগারেশনের পিসি তোমার দরকারঃ

প্রোগ্রামিং এর জন্য কেমন কনফিগারেশন লাগবে?

গত ২-৩ বছরে বের হয়েছে, এমন যেকোন কনফিগারেশনের ল্যাপটপ বা ডেস্কটপেই প্রোগ্রামিং করা যাবে। আমরা যদি আরেকটু ডিটেইলস এ যাইঃ

প্রসেসর/সিপিইউ

Intel, আর AMD Ryzen বর্তমানের ভালো প্রসেসর। তুমি যখন প্রোগামিং প্রোজেক্ট রান করবে, এই প্রসেসরের পাওয়ারই নির্ভর করবে কোডটা কত তারাতারি প্রসেস হবে। তাই যত ভালো স্পিডের প্রসেসর নিবে, তত ফাস্ট তোমার পিসি চলবে।

এই দুই প্রোসেসর কোম্পানীর জেনারেশন আছে, যত পরের জেনারেশন, তত ভালো এই প্রসেসরটা কাজ করবে। যেমন ইন্টেলের এখন ১২ তম জেনারেশন চলছে। তার মানে ১২ জেনারেশনের প্রসেসর, স্বাভাবিক ভাবেই, ১১ তম জেনারেশনের চেয়ে ভালো হবে।

কিন্তু,

এর মধ্যে আরেকটা ভেরিয়েশন আছেঃ

ইন্টেলের তিন চারটা সিরিজের প্রসেসর আছেঃ Core i3, Core i5, Core i7 ইত্যাদি। এক একটা কোর, আরো বেশি পাওয়ারফুল। তাই তোমার বাজেট অনুযায়ী একটা Core সিরিজের প্রসেসর নিবে।

অন্য দিকে তুমি যদি AMD Ryzen এর প্রসেসর নাও, তাহলে Ryzen 5 বা Ryzen 7 সিরিজের টা নিবে।

র‍্যাম

একটা পিসিতে যত বেশি র‍্যাম থাকে তত বেশি প্রোগ্রাম একসাথে তুমি রান করতে পারবে। তার মানে যখন তুমি প্রোগ্রামিং করছো তুমি হয়তো কোড কম্পাইল করছো, আর সাথে তুমি আরেকটা প্রোগ্রাম ওপেন করেছো, বা ইউটিউবে একটা ভিডিও দেখছো। যত বেশি র‍্যাম হবে তত বেশি তুমি এই সব কাজ অনায়াসেই করতে পারবে।

বর্তমানে তুমি টার্গেট রাখবে ১৬ জিবির বেশি DDR4 র‍্যাম নিতে। ১৬ জিবি না পারলে অন্তত ৮ জিবির নিচে ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ নিও না।

DDR4 হলো র‍্যাম এর ৪র্থ জেনারেশন। অবশ্যই DDR4 র‍্যামগুলো তার আগের জেনারেশন DDR3, আর DDR2 এর চেয়ে বেটার। এই জিনিসটাও মাথায় রাখবে।

একটা প্রোগ্রামিং কম্পিউটার বানাতে প্রসেসর আর র‍্যামই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ন। বাকি সব জিনিসগুলো তোমার পছন্দ অনুয়ায়ী নিয়ে নিবে।

কত বাজেটের পিসি বা ল্যাপটপ কিনবো?

১৬ জিবি র‍্যাম আর লেটেস্ট প্রসেসর এর একটা নতুন পিসি বা ল্যাপটপ এর জন্য বর্তমান বাজারে তোমাকে ৫০-৬০,০০০ টাকা খরচ করতে হবে।

এখানে স্টারটেক থেকে একটা লেটেস্ট ল্যাপটপ দেখালামঃ

এখানে আরেকটা প্রি-কনফিগারেশন করা পিসি দিলামঃ

আমার সাজেস্ট করা কনফিগারেশন অনুযায়ী নতুন একটা ডেস্কটপ বা ল্যাপটপ এর জন্য আনুমানিক ৫০-৬০ হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু যদি তুমি আরো ঘাটাঘাটি করো, আর নিজের জন্য কাস্টমাইজ একটা ডেস্কটপ বানাও তাহলে হয়তো আরো কিছু টাকা সেভ করতে পারবে।

সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ এর ব্যাপারে

তুমি যদি অভিজ্ঞ পিসি/ল্যাপটপ ইউজার না হয়ে থাকো তাহলে সেকেন্ড হ্যান্ড বা রিফারবিশ ল্যাপটপ না নেওয়াই ভালো। এখন যদি তোমার বাজেট একদমই কম থাকে, তাহলে তুমি একদম নতুন 3rd, 4th জেনারেশনের একটা ডেস্কটপ বানিয়ে নিতে পারবে।

পুরনো ডেস্কটপ সাধারনত পুরনো ল্যাপটপের চেয়ে বেশি টেকসই হয়। তাই যদি সেকেন্ড হ্যান্ড নিতে হয় তাহলে পুরনো একটা ডেস্কটপ নিও।

এখন যেহেতু তুমি পিসির একটা ভালো ধারনা পেয়ে গেছো, আগামী কয়েক সপ্তাহ আরো রিসার্চ করে একটা পিসি বা ল্যাপটপ নিয়ে নাও।


Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *